
রাজা জানকীবল্লভ সেন (১৮৩৫-১৯১০) ছিলেন রংপুরের জমিদার নীলকমল সেন ও চৌধুরাণী শ্যামা সুন্দরী দেবীর (দেবী চৌধুরাণী) পুত্র । সন্তান না থাকায় শ্যামা সুন্দরী দেবী তাকে বর্ধমান জেলার বাগনা গ্রাম থেকে দত্তক নেন।

উল্লেখ্য, বাবু হররাম সেনের নামের পূর্বে “বাবু” শব্দটি বাংলার নবাবদের থেকে তার উপাধি ছিল। বাবু হররামের নামানুসারে বাবুরহাট নামকরন হয়েছে। হররামের মৃত্য হলে তদীয় পুত্র রামজীবন ডিমলার জমিদারীত্ব পায়,তিনি রামমন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন এখনো তার নামে একটি রামডাঙ্গা গ্রাম রয়েছে, তিনি ১৮০৭ মারা যান।পরবর্তীতে তার পুত্র জয়রাম জমিদারিত্ব পান, তিনি অনেক দানশীল বলে খ্যাত ছিলেন,জয়রামের মৃত্যু হলে তার দত্তক পুত্র নীলকমল ডিমলার জমিদারীত্ব লাভ করেন, তিনি অল্প বয়সে রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান,নীল কমলের কোন সন্তানাদি না থাকায় মৃত্যুর আগে তিনি স্ত্রী শ্যামাসুন্দরীকে চৌধুরানি দত্তক গ্রহন করতে বলেছিলেন। তারই ফলশ্রুতিতে শ্যামাসুন্দরী , জানকীবল্লভ সেনকে বর্ধমান জেলার বাগনা গ্রাম থেকে দত্তক গ্রহন করেছিলেন।
আতঃপর জানকীবলস্নভ সেন ডিমলার জমিদারিত্ব পেয়ে নিজে যোগ্য শাসক হিসেবে গড়ে তোলেন।তিনি তৎকালীন অবৈতনিক ম্যাজিষ্ট্রেট ছিলেন, এছাড়াও লোকাল বোর্ড চেয়ারম্যান, রংপুর জেলা বোর্ড সদস্য, রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যানের আসন অলঙ্কৃত করেছিলেন। রংপুর শহরে তার বাগানবাড়ি ছিল।সেই বাগান বাড়ীটি পৌরসভার কার্যালয় হিসাবে তিনি ব্যবহার করতেন সর্বশেষ তিনি পৌরসভার ভবনটি দান করে দেন।
তিনি পৌর চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় রংপুর শহরে “শ্যামা সুন্দরী ক্যানেল” খনন করেন। সেই সময় মশার উপদ্রব ও ম্যালেরিয়া রোগের প্রকব অনেক বেশি ছিল।উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলনা তাই ম্যালেরিয়া প্রভাবে বছর বছর অসংখ্য রোগি মারা যেত।রক্ষাপায়নি জমিদারের মাতা শ্যামা সুন্দরী। তিনিও ম্যালেরিয়া রোগে মারা যান। মাতৃ বিয়োগের পর জানকীবল্লভ সেন মনে কষ্ট নিয়ে ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ প্রকল্পে রংপুর শহরের মধ্যে জমে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি ক্যানেল খননের পরিকল্পনা করেন।তারই ফলশ্রুতিতে পশ্চিমে ঘাঘট নদী থেকে শহর হয়ে পূর্বে মাহিগঞ্জ পর্যন্ত ১৪কি:মি: দৈর্ঘ্য এবং ১২০ ফুট প্রস্থ ক্যানেলটি খনন করেন (১৮৯০খ্রিঃ)। তিনি জনস্বাস্থ্য উন্নয়ন ও জলাবদ্ধতা অবসান উন্নয়নকাজে সক্ষম হলে,রংপুর জজকোর্ট ভবনের পাশে ক্যানেলটির উত্তর পারে তার মাতা শ্যামাসুন্দরীর নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন।
“মাতা শ্যামাসুন্দরীর স্মরণের তরে,
জানকীবল্লভ সূত এই কর্ম করে।”
এছাড়াও তিনি সমগ্র বঙ্গদেশের বহুজমিদারদের বিপদে সহযোগিতা করেছেন,তৎকালীন প্রজাদের আভাবের ৭৫ হাজার টাকার খাদ্য,রংপুর অঞ্চলে কৃষি গবেষণায় ৮ হাজার টাকা দান করেছিল। শুধু রংপুর সীমানায় নয় তার তিনি দার্জিলিং শৈল শিখরে হিন্দুদের জন্য হাসপাতাল নির্মান করে প্রজাদরদী মনের পরিচয় বহন করেছিলেন। ব্রিটিশ সরকার তার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়ে ১৮৯১ সালে তাকে রাজা উপাধিতে ভূষিত করেন।
জানকীবল্লভ সেন মৃত্যপূর্ব তথা ১৯০৮ খ্রিঃ এক উইল বলে ডিমলা জমিদারীকে মুজকুরী ও দেবোত্তর এস্টেটে বিভক্ত করেন । দেবোত্তর এস্টেটের শুধু জমির পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৬৫ একরসহ বহু অস্থাবর সম্পত্তি। একমাত্র নাটোরের মহারানী রানী ভবানী ছাড়া এতবড় দেবোত্তর এস্টেট সাবেক রঙ্গপুর জেলায় এমনকি উত্তরবঙ্গের আর কোন জমিদারীতে ছিল না। এই দেবোত্তর এস্টেটের প্রথম সেবায়েত নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে ছিলেন তার স্ত্রী শ্রীমতি রানী বৃন্দারানী।
জমিদার জানকীবল্লভের মৃত্যুকালে ডিমলা জমিদারীর মোট আয় ছিল ২ দশমিক ৩৮ লক্ষ টাকা ও সরকারী জমা ছিল ৩৫ হাজার টাকার উপরে।
জমিদার জানকীবল্লভ সেন স্ত্রী ও কিশোর পুত্র যামিনী মোহন কে রেখে ১৯১০খ্রিঃ ১৪ অক্টবর মানবলীলা ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল আনুমানিক ৭৫ বছর।
রাজা জানকী বল্লভ সেন ছিলেন অনারারী ম্যাজিস্ট্রেট, লোকাল বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জেলা বোর্ডের সদস্য। ১৮৯১ সালে ব্রিটিশ সরকার তার কাজে খুশি হয়ে তাকে রাজা উপাধি দেয়।তার মায়ের মৃত্যু ম্যালেরিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হয়। রংপুর শহরে মশার উপদ্রব ঠেকাতে তিনি ১৮৯০ সালে “শ্যামা সুন্দরী খাল” খনন করেন। তিনি বঙ্গের অনেক জমিদারকে নানাভাবে সাহায্য করেন। তিনি প্রজাদের অভাবে ৭৫ হাজার টাকার খাদ্য দান করেন। তিনি তৎকালীন রংপুরে কৃষি গবেষণার জন্য ৮ হাজার টাকা দান করেছিলেন। এছাড়া তিনি দার্জিলিঙের শিখরে হিন্দুদের জন্য হাসপাতাল নির্মান করেছিলেন। তিনি ১৯০৮ সালে এক উইলের মাধ্যমে ডিমলা জমিদারীকে দুটি ভাগ যথা মুজকুরী ও দেবোত্তর এস্টেটে ভাগ করেন । তার দেবোত্তর এস্টেট ছিল প্রায় ১২৬৫ একরের। এমন বিপুল দেবোত্তর এস্টেট শুধু নাটোরের মহারানী রাণী ভবানীর ছিল। যা সাবেক রঙ্গপুর জেলা বা উত্তরবঙ্গের অন্য জমিদারীতে কারো ছিল না। এই দেবোত্তর এস্টেটের প্রথম সেবায়েত হন তার স্ত্রী শ্রীমতি রানী বৃন্দারানী।
তিনি পুত্র যামিনী মোহন সেনের কিশোর অবস্থায় প্রায় ৭৫ বছর বয়সে ১৯১০ সালের ১৪ অক্টোবর পরলোক গমন করেন । তার মৃত্যুর সময় ডিমলা জমিদারীর মোট আয় ছিল ২ দশমিক ৩৮ লক্ষ টাকা । আর জমিদারির সরকারী জমা ছিল ৩৫ হাজার টাকারও বেশি।
তথ্যসূত্র:
01. ডিমলার জমিদার বংশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
02. Wikipedia